চাঁদপুর শহরকে যানজটের নাকাল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে হবে
——————————জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ
স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, সরকারের প্রতিটি প্রকল্পই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিটি প্রকল্পের কাজ সঠিক ভাবে করতে হবে, যে সব ঠিকাদার নিয়মিত কাজ করছেনা, প্রয়োজনে সে কাজের টেন্ডার বাতিল করতে হবে। উন্নয়ন কাজ থমকে থাকবে কেন তাদের কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের যাতে সঠিক ভাবে হয়, তার দিকে নজর রাখতে হবে। গত ১৯ ডিসেম্বর রোববার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলা শহরকে যানযটের নাকাল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে হবে। যানবাহনের ভীড়ে হেটে চলাফেরাই দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, চাঁদপুরে যে সকল অবৈধ ইজিবাইক, সিএনজি রয়েছে, তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। চাঁদপুরে এত বেশি ইজি বাইক, সিএনজি রয়েছে, তার জন্য মানুষ সড়ক দিয়ে পারাপার হতে পারছে না। চাঁদপুরে সিএনজির নতুন করে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রয়েছে। তারপরও এতো সিএনজি কেন। এসবের জন্য আমাদের আইনগত ব্যবস্থা চলমান থাকবে। জনস্বার্থে সকল কাজ গুলো করতে হবে, জনগনের যাতে ভোগান্তি না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, মতলব দক্ষিণে সড়কে অবৈধভাবে টোল আদায় বন্ধ করতে হবে। চাঁদা আদায় করলে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করতে হবে, সড়ক বিভাগ ছাড়া অন্য কেউ টোল আদায় করলে তা চাঁদা বাজি ছাড়া আর কিছুনা। চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়ক বিভাগের পাশের গাছগুলো যেগুলো রাস্তার উপর হেলে আছে, যান চলাচলে বাধা সেসব কর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। বনবিভাগ সরজমিনে গিয়ে কোন্ গাছ কাটতে হবে, কোন্ টা অসুবিধা করে সেটি চিন্হিত করে মূল্য নির্ধারণ করে জানাতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, কৃষকদের সার ঠিকমত কৃষক পায় কিনা তা নজর রাখতে হবে,কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নেয়া হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হবে। সম্প্রতি সময়ে টানাবর্ষনে যে সকল কৃষকদের ফসলাধী নষ্ট হয়েছে, তার ভর্তুকি জন্য উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তা জানান। কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালক সভায় অবহিত করেন যে, গত কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে চাঁদপুরে ৪ শ ৪১ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সভায় উঠে আসে, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিন,এবং সদরে মডেল মসজিদগুলো নির্মাণে মন্থর গতি এবং নানা অনিয়মের বিষয়গুলো। জেলা প্রশাসক এ বিষয়গলোর সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এসব দেখার এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এছাড়া জেলার বিদ্যুৎ, সমাজসেবা, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, শিক্ষা প্রকৌশল, স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ বিভাগ, এলজিইডি বিভাগসহ নানা বিভাগ ও অধিদপ্তরের বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।
জেলা প্রশাসককে সভায় জানানো হয়, মতলব দক্ষিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরাজীর্ণ অবস্থার কথা। তিনি অতি দ্রুত এটি সংস্কার অথবা বিল্ডিংকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্রুত এর জন্য কি কি করনীয় সেসব ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষদের তিনি নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরে বিজয় মেলা হচ্ছে, অনেক লোকের সমাগম হচ্ছে। এটির ভেতরের এবং বাইরের শৃংখলা জোরদার করতে বলেছি। তিনি বলেন, যে সকল গাড়ি দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের যাতায়াত করছে, সেসব গাড়িগুলোর পিটনেস আছে কিনা সেগুলো দেখতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৫ দিনব্যাপী চিত্র প্রর্দশনী হচ্ছে, সেগুলো শিক্ষার্থীদের দেখাতে হবে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, প্রাচীন ইতিহাস, রাজনীতিক ব্যক্তিত্বসহ অনেক খ্যাতিতমান ব্যক্তির ছবি প্রদর্শনী দেখলে, তারা অনেক সম্পর্কে জানতে পারবে। জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ আরো বলেন, এখন ইট ভাটার মৌসুম, মান সম্মত ইট তৈরি হয় কিনা, তার পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। এছাড়া অবৈধ ইটভাটা নষ্ট করে দিতে হবে। যারা এসব চালাবে তাদের কঠোর আইনী ব্যবস্থা। সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ভর্তি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, দয়া করে কেউ আমার কাছে ভর্তি তদবীর নিয়ে আসবেন না। ফোন করবেন না। এ ব্যাপারে আমার হাতে কোনরকম ক্ষমতা নেই। যা হয়েছে, হচ্ছে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী। এখানে স্বচ্ছতা অনেক।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেনের পরিচালায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শাহদাৎ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মিজানুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএইচএম কবির আহমেদ, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই তোয়াইহলা, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি, হাজিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনা আক্তার, কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দ্বিপায়ন দাস, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আকরতার, মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল হাসান, মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা হক, সমাজ সেবা অফিসার রজত শুভ সরকার, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ জেনারেল ম্যানেজার দেব কুমার মালো, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইফতেখার হোসেনসহ বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, শিক্ষা অধিদপ্তর বিভাগ, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগ, সড়ক বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, আনসার ভিডিপি, পিডিবি, কোস্টগার্ড, যুব উন্নয়ন, লাইব্রেরিয়ান, মেরিন ইন্সটিটিউটেরসহ প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তাগন বক্তব্য রাখেন।