টাইমস বাংলা ডেস্কঃ
সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও আগামি ২৬ জুন একযোগে শুরু হচ্ছে এইচএসসি,মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও ভোকেশনাল পরীক্ষা। সারাদেশের ন্যায় জেলার ৮ উপজেলায় এক-অভিন্ন সময় ও নিয়ম নীতিতে সকাল ১০ টায় এ পরীক্ষা শুরু হবে। চাঁদপুরে এবার ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এইচ এসসি ও সমমানের ৫২ কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছে ১৮ হাজার ২শ ৪০জন পরীক্ষার্থী।
সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি ও সরকারি দিকনিদের্শনা মতে সংশ্লিষ্ঠ নীতিমাল অনুসরণ বা মেনে চলার জন্যে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ১৮ জুন বেলা ১১ টায় মান্যবর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভাটি হয়। সভায় চাঁদপুর জেলার ৫২ টি কেন্দ্রের কেন্দ্র- সচিব ও সহকারী কেন্দ্র সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন্ সংশ্লিষ্ঠ সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের উপস্থিতিতে আসন্ন এইচ এসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি ও সরকারি দিকনিদের্শনা জানানোর জন্যে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ গুরুত্বপূর্ণ সভাটি হয়। এ বছর চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এইচএসসিতে ৫২ কেন্দ্রে এইচএসসি,আলিম, বিএম ও এইচ এস সি ভোকেশনালে ২০২৫ পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের শিক্ষা শাখার সূত্র মতে, জেলায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৭শ ৭ জন এবং কেন্দ্র ৩১ টি, মাদ্রাসা বোডের্র আলিম পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৪শ’ ৯৫ এবং কেন্দ্র ১১ টি । ব্যবসা ব্যবস্থাপনা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১শ’ ৪০ জন ও কেন্দ্র ৩টি এবং ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৯ জন ও কেন্দ্র ৭ টি। এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্যে জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনেকগুলো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের শিক্ষা শাখা কর্তৃক সরকারি নির্দেশিকা পাঠ করে উপস্থিত সকলকে অবহিত করা হয়। নকলমুক্ত ও শান্তিপ্রিয় পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
পরীক্ষার হলে সকল ধরনের অসাধু উপায় বর্জনের জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া হুঁশিয়ারি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যদি কোনো শিক্ষক অসাধু উপায় অবলম্বন করে এবং তা প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা যায় । শিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সার্বক্ষণিকভাবে সারাদেশের এইচএসসি ও সমমানের সকল পরীক্ষা তদারকি করা হবে।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর পূর্বে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোন নম্বরে সেট কোড ব্যবহারের নির্দেশনার এসএমএস যাওয়ার পর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা যাবে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কেউ মোবাইলফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা কেন্দ্রের ২শ’ গজের ভেতর পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি নিদের্শনায় টিকা ব্যতীত কোনো পরীক্ষার্থী এইচএসসি,মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেনা। তাদের টিকা গ্রহণে সকল ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা কক্ষে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। সরকারি প্রতিটি নিদের্শনা মেনে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে এবার আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী গতবারের চেয়ে ৮১ হাজার ৮৮২ জন কমেছে। তিন বছরের মধ্যে এবারই পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। আরও আশঙ্কার বিষয়, দুই বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির পর রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করেও সোয়া চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন না। শতাংশের হিসাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এই হার বেশি। আর সংখ্যায় তা এইচএসসিতে বেশি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন,একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা না দেয়াটা উদ্বেগজনক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির জানান,এমনিতেই দেখা যায় পর্যায়ক্রমে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ে। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে এ ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য এবং শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাওয়া। এসএসসি পাসের পর অনেক শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এটাও ঝরে পড়ার আরেকটি বড় কারণ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ করতে গিয়ে তাঁরা এ রকম তথ্য পেয়েছেন। এখন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও প্রকৃত কারণ জানার জন্য এ রকম একটি জরিপ করা হবে।
২৬ জুন শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড,বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১শ ১১ জন।এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। গতবারের তুলনায় এ বছর এইচএসসিতে প্রায় ৭৩ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিমে পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় দু’ হাজার। আলিমে এবার পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনপরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। কমেছে সাত হাজারের মতো।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে,মাদ্রাসা-কারিগরিসহ ১১ টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছিলেন ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬শ ৮৯ জন। তাঁদের মধ্যে পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন ১০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। অবশ্য নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অনিয়মিত শিক্ষার্থী মিলিয়ে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী আরও বেশি। শিক্ষা বোর্ড সূত্রমতে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় একাদশ শ্রেণিতে (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৯শ ৬৭ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন।
নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজারের মতো (প্রায় ২৭ % ) পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম পূরণ করেননি। এ রকম শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে, ৭৫ হাজারের বেশি। এ বোর্ডে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর নিবন্ধন করেছিলেন সোয়া তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন আড়াই লাখের মতো শিক্ষার্থী। একই শিক্ষাবর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় আলিম প্রথম বর্ষে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৯ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৭৯ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন। নিবন্ধন করা প্রায় ৩৯% শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম পূরণ করেননি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় একাদশ শ্রেণিতে (ভোকেশনালে) প্রায় ১ লাখ ৫৯ হাজার শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৯৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে সাড়ে ৬৩ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেননি। ফরম পূরণ না করা শিক্ষার্থীর হার প্রায় ৪০%।