ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কমলের পাশে দাঁড়াল চাঁদপুর জেলা প্রশাসন (ভিডিও)

চাঁদপুরের শাহতলী গ্রামের জুতা সেলাইকারী (মুচি) হতদরিদ্র কমল চন্দ্র ঋষির (৩৬) পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। সংবাদ প্রকাশের পর কমলকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ১৫ হাজার নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ।

পাশাপাশি মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাকে দুই শতক জমিসহ ঘর উপহার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কমল চন্দ্রের অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার ভার নেওয়ার কথাও জানান ডিসি অঞ্জনা খান মজলিশ।

কমল চন্দ্র ঋষির দরিদ্রপীড়িত অবস্থা পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার বিকাল আড়াইটার দিকে শাহতলী রেলওয়ে স্টেশনের পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডিসি অঞ্জনা খান মজলিশ।

চাঁদপুরের ডিসি বলেন, ‘যুগান্তরে দেখলাম, কমল চন্দ্র ঋষি আক্ষেপ করে বলছিল— জুতা সেলাই করতে পারলেও নিজের কপাল সেলাই করতে পারি না।’

‘এ সংবাদ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমিও দেখেছি। সংবাদটি পড়ার পর পরই আমি তাকে (কমল) আমার কার্যালয়ে এনে তার দুঃখ-কষ্টের কথা শুনি। জানতে পারলাম, সারাদিন জুতা সেলাই করে সে যা আয় করে তা দিয়ে সে তার সংসারের খাবার খরচের টাকাই জোগাড় করতে পারে না। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য সে কিছুই করতে পারে না। তার থাকার মতো কোনো ঘরও নেই। রেলে সরকারি জায়গায় থাকে, যেটি তার নিজের না। আর তার ঘরের অবস্থাও ভালো না। ঘরের টিনের জায়গায় জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। তার ঘর দেখার পর ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম কি করে তার পুনর্বাসন করতে পারি। এর পর তার জন্য খাসজমি খুঁজে বের করা হয়েছে। সেখানে  প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাকে ঘর উপহার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে তার মায়ের চিকিৎসাব্যবস্থা করেছি আমরা। চিকিৎসার জন্য যত অর্থ ব্যয় হবে তা জেলা প্রশাসন বহন করবে।’

 

উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরের অনলাইনে ‘জুতা সেলাই করলেও নিজের কপাল সেলাই করতে পারি না’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

যেখানে কমল চন্দ্র ঋষির কষ্টের জীবন সংগ্রাম তুলে ধরা হয়।  নিজের জরাজীর্ণ অবস্থার কথা জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কমল যুগান্তরকে বলেছিলেন—  ‘আমি ছেঁড়া জুতা সেলাই করি, কিন্ত আমার ভাঙাচোরা কপালটা সেলাই করতে পারি না। কাইলকা ২০০ টাকার কাম করছি। ১০০ টাকা দিয়া বাজার করছি৷ আর ১০০ টাকা দিয়া মায়ের ল্যাইগা ওষুধ আনছি। মায়ের এক হাত এক পা লাড়াইতে পারে না। সাত বছর ধরে সারাক্ষণ শুইয়া থাকে। টাকার অভাবে ওষুধও খাওয়াইতাম পারি না। কত কষ্ট পায় মায়।’

ভূমিহীন এই হতদরিদ্র স্টেশনের পরিত্যক্ত একটি কোয়ার্টারের পাশে একটি ঘর তৈরি করে থাকেন।

ঘর বললে ভুল হবে, বাঁশ ও টিন দিয়ে চারপাশ তৈরি খাঁচার ওপরে পলিথিন মোড়ানো একটি খুপড়ি। ভাঙাচোরা ছোট এই ঝুপড়িতেই দুই মেয়ে এবং অসুস্থ মাকে নিয়ে বসবাস করেন কমল।

সরেজমিন গিয়ে দেয়া যায়, ঘরের টিনে মরচে ধরেছে, জায়গায় জায়গায় ভাঙা। আর পলিথিনগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। ঘরটি এখন বসবাসের অযোগ্য । ঘরে আসবাব বলতে ছোট একটি কাঠের আলমারি। আর কিছুই নেই। ঘরের এক কোণে বাঁশের তৈরি একটি চৌকিতে শুয়ে কাঁপছেন কমলের অসুস্থ মা মমতা ঋষি (৬৫)।

স্থানীয়রা জানান,  একদিন কমলের মা পড়ে গিয়ে হাতে এবং পায়ে আঘাত পান । কিন্তু তখন টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারেননি। ফলে দীর্ঘদিন চিকিৎসা না পেয়ে এখন তার মা পঙ্গু। তার এক হাত এক পা অবশ হয়ে গেছে। পাশাপাশি নানান রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। গত সাত বছর ধরে এমন অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন মমতা ঋষি।

চোখের সামনে মায়ের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকার করুণ দৃশ্য কমলের জীবনকে করে তুলেছে আরও দুর্বিষহ বেদনার।

সর্বশেষ - চাঁদপুরচাঁদপুর সদর

জনপ্রিয় - চাঁদপুরচাঁদপুর সদর