স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিলে শীতের আগমনে অতিথি পাখিদের বিচরণ শুরু হয়েছে। গত ক’দিন ধরেই বিলের মাঝখানে দলবদ্ধভাবে অতিথি পাখিদের বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর বিলে অতিথি পাখিদের সংখ্যা কিছুটা বেশী লক্ষ্য করা যায়। শুধু মতলবের বিলগুলোতেই নয় উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা নদী বেষ্টিত উপজেলার নদীর পাড় ও মেঘনায় জেগে উঠা চরাঞ্চলে শীতের এই অতিথি পাখিদের বিচরণ রয়েছে। এসব অতিথি পাখি প্রবল তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য তুলনামূলক অনেক কমশীত প্রধান হিসাবে প্রতি শীত মৌসুমেই এই দেশে আসে। আর এইসব অতিথি পাখিদের বেশীরভাগই আসে সাইবেরিয়াসহ অধিক শীত প্রধান অঞ্চল থেকে। অতিথি পাখির দল মতলবের চরাঞ্চল ও নদীর পাড়ে ছোট শামুক, ঘাস, শষ্যদানা, ছোটমাছ আর পোকা-মাকড় খায়। আগত এসব পাখির মধ্যে বালিহাঁস, পিয়ং হাঁস, সেরিয়া হাঁস, চোখা হাঁস, কঙ্গাই হাঁস, কালকুচ, গঙ্গা কবুতর, গাংচিল, বিলাতি শালিক উল্লেখযোগ্য।
মতলবের চরাঞ্চলের প্রবীণদের সাথে কথাবলে জানা যায়, দীর্ঘ অনেক বছর যাবতই এঅঞ্চলে অতিথি পাখিদের বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে। তবে বছরের পর বছর এখানে অতিথি পাখির সংখ্যা যেনো কমে আসছে। নির্বিচারে ঝোপঝাড় উজাড়, চরাঞ্চলে ঘরবাড়ি নির্মাণ, জলজ আগাছা পরিষ্কার, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং অতিথি পাখিদের শিকার করার কারনেই যেনো এসব অঞ্চলে দিনে দিনে অতিথি পাখিদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আইনের তোয়াক্কা না করে নগদ অর্থের লোভে অভিনব কৌশলে এসব অতিথি পাখি নিধনে তৎপর হয়ে উঠেছেন শিকারিরা। পাখি ধরতে নতুন কৌশল হিসেবে তারা কাজে লাগাচ্ছে বাঁশির সুর। শিকারের পর আকারভেদে এসব পাখি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আবার এক শ্রেণির মানুষ কোনো কিছু বিবেচনা না করেই এসব পাখি কিনে নিচ্ছেন কেবলই রসনা বিলাসের জন্য।দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শিকারিরা রাতের বেলায় অবাধে পাখি শিকার করে ভোরের আলো ফোটার আগেই তা বিক্রি করছে। এসব শিকারিরা রাতে জলাশয়ের পাশে ফাঁদ পেতে রেখে ধান খেতে বসে পাখির ডাকের সাথে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজায়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাখিই সেখানে উড়ে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ে আটকে যায়। পাখি শিকারের জন্য পাখির ডাকের সাথে মিলিয়ে বাঁশির সুর তৈরির অভিনব কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিযনের এক শিকারি জানান, তালপাতার সাথে স্কচটেপ জড়িয়ে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিক হর্নের কভারের এক মাথায় সুপারগ্লু লাগিয়ে রাবারের সাহায্যে অভিনব এ বাঁশি তৈরি করা হয়। এছাড়া শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। রাতে উড়ে বেড়ানোর সময় ওই ফাঁদে আটকা পড়ে অনেক পাখি। আবার চোখে আলো ফেলে, কেঁচো দিয়ে বড়শি পেতে, কোচ মেরে এবং কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকেন কিছু শিকারি।