কথিত কোটি টাকা দামের তক্ষক কিনতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে খুন হন এনজিও কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। পরে গহিন জঙ্গল থেকে তাঁর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনার মূল হোতা মো. শাহাজাহানকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শাহাজাহান চট্টগ্রামের ভুজপুর উপজেলার দক্ষিণ পানুয়া গ্রামের মো. রফিকের ছেলে।
শুক্রবার বিকেলে শাহাজাহানের নিজ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, এনজিও কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন শাহজাহান। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর হেলালের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা পিংকি ভুজপুর থানায় মামলা করেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ওই বছরের ১৮ নভেম্বর তক্ষক কেনার জন্য হেলাল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভুজপুরে আসেন। ২৩ নভেম্বর তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্বামীকে একদল লোক ভুজপুর-রামগড় এলাকায় জিম্মি করে রেখেছে। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ মিলছে না। ভুজপুর থানায় করা মামলাটি পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।
হেলাল উদ্দিন (৩৭) ঢাকার মুগদা থানার মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা। তিনি সেতুবন্ধন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মদিনাবাগ শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। এক বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পর গত বছর নভেম্বর তাঁর কঙ্কাল পাওয়া যায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। তাঁকে হত্যার পর মরদেহ জঙ্গলের ভেতরে প্রায় ৫০ ফুট গভীর গর্তে পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে একজনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর মাধ্যমে পিবিআই কর্মকর্তারা ওই মরদেহের সন্ধান পান।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই ২০২০ সালে ২৩ জুলাই রামগড়-বাগানবাজার এলাকায় পাহাড়ি পথে যাত্রী বহনকারী এক মোটরসাইকেলের চালক জাকির হোসেন রুবেলকে (২৪) গ্রেপ্তার করে। ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতে জবানবন্দিতে রুবেল জানান, ২৩ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে বাগানবাজার ইউনিয়নের লালমাই গ্রামের জনৈক রাজা ভাই তাঁকে বলেন, পার্শ্ববর্তী চিকনছড়া বাজারে হেলাল নামে এক লোক এসেছেন, তাঁকে তাঁর (রাজা) বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। রুবেল যখন হেলালকে নিয়ে রাজা ভাইয়ের বাড়িতে যান সেখানে ইসমাইল, সাদ্দাম ও বিল্লালকে দেখেন। এরপর আর কিছু তিনি জানেন না বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।
এরপর তক্ষকের ক্রেতা সেজে ফাঁদে ফেলে পিবিআই টিম ঘটনায় জড়িত মো. বেলাল ওরফে বিল্লাল ও রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল জানান, হেলালকে হত্যা করে মরদেহ খাগড়াছড়ির কাছে ফটিকছড়ির বাগানবাজার ইউনিয়নের নুরপুর এলাকার পাহাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। তক্ষকের দামে বনিবনা না হওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় উভয়েই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।