স্টাফ রিপোর্টার : পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনের একদিকের দুটি কক্ষে চলছে নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও সেবা বিভাগের কাজ। যদিও নারায়ণপুরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। এই ইউনিয়নের তথ্য সেবার কাজ চলছে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবনের দুটি কক্ষে। তার ঠিক বিপরীত পাশের কক্ষটিতে প্রসূতি মায়েদেরকে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। পাশের কক্ষে এক অন্তঃসত্ত্বার স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে। লোকজনের হইচই আর শব্দে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রসূতি সেবা। এমন দৃশ্য চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। পয়ালী গ্রামে অবস্থিত এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুটি কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ইউপির তথ্য সেবা কার্যক্রম। এতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা মায়েদের স্বাভাবিক সেবা গ্রহণ বিঘ্নিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দোতলা আবাসিক ভবনের নিচের তলায় আটটি কক্ষের দুটিতে গত ২০১০ সাল থেকে চলছে ইউনিয়নের তথ্য ও সেবার কাজ। বাকি ছয়টি কক্ষের একটি কৈশোরবান্ধব কর্নার, একটি অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি), একটি স্টোররুম ও একটি প্রসব কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া একটি কক্ষে স্বাস্থ্যকর্মী ও অপরটিতে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক বসেন। একই ভবনে দুটি কার্যক্রম চলায় এবং ব্যাপক মানুষের আনাগোনার কারণে বিব্রত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা গর্ভবতী নারীরা।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে আসা পয়ালী গ্রামের রহিমা বেগম জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সব কথা বলতে পারি না। পাশের রুমে অনেক মানুষের আনাগোনা। অনেক সময় পুরুষদের গায়ের সঙ্গে ধাক্কাও লাগে।
আরেক নারী সেবা প্রার্থী জোহরা বেগম বলেন, প্রসব বেদনা নিয়ে মায়েরা এখানে ভর্তি হয়। ওই সময় অনেক সমস্যা হয়। প্রসব যন্ত্রণায় মায়েরা চিৎকার দিলে পাশের রুমের মানুষজন সেটি শুনতে পায়। এতে করে ওই মা ও পাশর্^বর্তী মানুষ উভয়কেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আমরা চাই এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেন শুধু স্বাস্থ্যসেবাই দেওয়া হয়। তথ্য সেবাকেন্দ্রটি যেন অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, এখানে প্রতি মাসে গড়ে ১৫-১৬টি এবং বছরে গড়ে ১৮০-১৯০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়। উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের মায়েরা এখানে প্রসবসেবা নিচ্ছেন। ২০১৩ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১ হাজার ১৭০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক খালেদা আক্তার বলেন, ইউনিয়নের তথ্য সেবাকেন্দ্রের কারণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় বাইরের মানুষ শুনতে পাওয়ার ভয়ে প্রসূতি মায়েরা লজ্জায় চিৎকারও দিতে পারে না। নিরাপদ মাতৃত্বের স্বার্থে অচিরেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তথ্য সেবা কার্যক্রম বন্ধ হওয়া জরুরী। এ ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
নারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জহিরুল মোস্তফা তালুকদার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় ভবনের অভাবে অস্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তথ্যসেবা চালু রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি শিগগিরই তথ্যসেবা কেন্দ্রটি সরিয়ে নেওয়ার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুসরাত জাহান মিথেন বলেন, নারীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন এবং কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সে জন্য শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।