ঢাকা, সোমবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ চাঁদপুরবাসী

শীত যেতে না যেতেই হঠাৎ করে চাঁদপুর জেলাজুড়ে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মশার এই যন্ত্রণায় রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন জেলার ২৬ লক্ষাধিক মানুষ। বাজার থেকে কেনা সাধারণ কয়েল বা স্প্রে দিয়েও মশার উপদ্রব ঠেকানো যাচ্ছে না। সাধারণত বর্ষাকাল শুরু হলেই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকাল শুরুর আগেই চাঁদপুর জেলায় বেড়েছে মশার উপদ্রব। প্রায় মাসখানেক ধরে পুরো জেলায় মশা রাজত্ব বিস্তার করছে। রাতে তো বটেই দিনেও মশার যন্ত্রণায় বাসাবাড়ি এমনকি অফিসেও টেকা দায় হয়ে পড়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কমবেশি মশা থাকলে চাঁদপুর শহরে মশার প্রকোপ অনেকটাই বেশি বলে শহরবাসী বলছে।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে হঠাৎ মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় সর্বসাধারণের মাঝে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারি আতঙ্কের সাথে এখন ডেঙ্গুর ভয়ে আছে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত মশা নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠছে সর্বমহলে।
চাঁদপুর শহরবাসী বলছে, এই মুহূর্তে দিন কিংবা রাত নেই সর্বত্রই মশার উপদ্রব। এমনকি রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে বিপণী বিতান, সবখানেই মশার উপদ্রব। মশারা দলবল নিয়ে মানুষের রক্তের সন্ধানে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। এ অবস্থায় মশার উপদ্রবে অসহায় হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষসহ শিশুরাও।
এদিকে মশার হাত থেকে বাঁচতে দিনে-রাতে বাসা-বাড়িতে কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা অ্যারোসল ব্যবহার করলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলছেন অনেকেই। ভুক্তভোগীরা বলছেন, মশা কয়েলের ধোঁয়ার ওপর দিয়েই ঘুরছে। এতে করে বাসা-বাড়িতে শিশু বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে গৃহিনীরা। এছাড়া অনেকেই দিনের বেলাতেও মশারি টাঙাতে হচ্ছে বলে জানান।
নাজিরপাড়ার বাসিন্দা আফরোজা খানম বলেন, বাসার ৫ তলায় থাকি। কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নেই। এ এলাকায় পৌরসভা নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করছে তবুও মশার উপদ্রব কমছে না।
মশায় অতিষ্ঠ পালপাড়ার বাসিন্দা মো. মাজেদ ভূঁইয়া বলেন, মশার জ্বালায় বাসার বাইরের দিকের জানালা-দরজা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ কারণে দিনের আলো-বাতাস বাসায় প্রবেশ করতে পারছে না। এছাড়া বাসায় কয়েল কিংবা অ্যারোসল ব্যবহার করেও মশাকে কিছুতেই কাবু করতে পারছি না।
শহরের মুন্সেফ পাড়ার গৃহিনী জেসমিন আক্তার বললেন, বিকেল থেকেই মশা বেড়ে যায়। বাসায় ছেলে-মেয়েরা পড়তে বসতে পারে না মশার কামড়ে। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাদের মশারির ভেতরে থাকতে হয়। কয়েল দিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে আড্ডারত বেশ কিছু তরুণ-যুবক জানান, আড্ডা বেশিক্ষণ স্থায়ী করা যায় না। ইদানিং মশার অত্যাচার এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, এক জায়গায় বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকা যায় না, ঘিরে ধরে মশা।
তারা আরো বলছে, পৌরসভা মশা মারতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেরি করায় মশার উপদ্রব বাড়ছেই। বাসায় যেমন মশার অত্যাচার আছে, তেমনি বাসার বাইরে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হতে হয়।
সচেতন মহল বলছে, এ বছর শহরে আগের তুলনা মশার ঘনত্ব বেশি। মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ দ্রুত ক্র্যাশ প্রোগামের মাধ্যমে ব্যবস্থাগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। এজন্য ভালো মানের কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন বলে তারা মন্তব্য করছেন। এছাড়া প্রশাসনিকভাবে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারেও মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। নাহলে ডেঙ্গুর মতো রোগব্যাধীর আশঙ্কা দেখা দিবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে চাঁদপুর পৌরসভা বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা গিয়ে নাগরিকদের সচেতন করছেন এবং মোশার ঔষধ ছিটানো শুরু করেছে। গত বুধবার পৌরসভার মেয়রের নির্দেশে ৬নং ওয়ার্ড থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেন পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ সোহেল রানা।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র অ্যাড. হেলাল হোসাইন বলেন, পৌরসভা নাগরিকদের সব প্রকার সমস্যার সমাধান এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আমরা পৌর পরিষদ বদ্ধপরিকর। পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত মশক নিধন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পৌরসভার সবগুলো ওয়ার্ডে কীটনাশক ছিটানো হবে।
তিনি পৌর নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আপনাদের চারপাশের জমানো ময়লা আবর্জনা পরিস্কার-পরিছন্ন রাখুন। তাহলে কিছুটা হলেও মশার উপদ্রব কমবে। প্রতিনিয়ত পৌরসভার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মীরা প্রত্যেক ওয়ার্ডের সব মহল্লায় যাচ্ছে। তাদের দিয়ে আপনাদের চারিপাশের জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করানোর ব্যবস্থা করুন।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল জানান, মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধনের কাজ চলমান।
উল্লেখ্য, শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের প্রধান ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিস্কার না করায় সেগুলো প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। সেখানে মশা বংশ বিস্তার করছে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিস্কার না করলে মশা কমার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন অনেকে।

সর্বশেষ - চাঁদপুর

জনপ্রিয় - চাঁদপুর