চাঁদপুরে চাঞ্চল্যকর ঘটনা পুলিশী হামলা শিকার রক্তাক্ত জখম আইনজীবি আব্দুল্লাহ হিল বাকীর বিরুদ্ধে পুলিশকে কর্তব্যরত অবস্থায় মারধর করার অভিযোগে ঘটনার ৮দিন পর চাঁদপুর সদর মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মোঃ হিমন ইসলাম কর্তৃক পেনাল কোড ১৮৯/৩৩২/৩৫৩/৩০৭/৫০৬ ধারার অভিযোগ এনে আজ সোমবার (২৪ জানুয়ারী) বিকেলে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। যার মামলা নং- ৪০/৪০, তারিখ ২৪/০১/২০২২ইং।

এ ছাড়া আহত আইনজীবী আব্দুল্লাহ হিল বাকীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ সোমবার (২৪ জানুয়ারি) চাঁদপুর সদর কোর্ট আদালতে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. হিমন ইসলামের বিরুদ্ধে আইনজীবিকে রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত ১৭ জানুয়ারি শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে ফয়সাল মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটার পরদিন (১৮ জানুয়ারি) চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ আহত আইনজীবিকে দেখতে চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে যান এবং ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

এদিকে, এ ঘটনার পর গত ১৮ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল্লাহ্ হিল বাকীকে হামলাকারী চাঁদপুর মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক হিমন ইসলামের শাস্তির দাবীতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরের আইনজীবীরা প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

সেখানে আইনজীবীরা বলেন, গত সোমবার দুপুরে আইনজীবী অ্যাডঃ আব্দুল্লাহ হিল বাকী তার কোটের দায়িত্ব (কাজ) শেষে ড্রেস পড়া অবস্থায় বাসায় যাওয়ার পথে চাঁদপুর শহরের বাসষ্ট্রান্ড এলাকায় চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই হিমন তার ব্যবহৃত হেলমেট দিয়ে তাকে মাথায় আঘাত করেন। মারাত্মক আহত আইনজীবী অ্যাডঃ আব্দুল্লাহ্ হিল বাকী চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি অ্যাডঃ আহসান হাবিব। সমিতির সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, অ্যাড. ফজলুল হক সরকার, অ্যাড. রুহুল আমিন সরকার, অ্যাড. জহিরুল ইসলাম, মো. শাহজাহান মিয়া, কোহিনুর রশিদ, মো. কামরুল ইসলাম রোমান, মোঃ আবুল খায়ের খান, মো. জসিম উদ্দিন খান, মো. শাহাদাত হোসেন, কামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. মোবারক হোসেন, শরীফ মাহমুদ ফেরদাউস শাহিন, মো. জসিম উদ্দিন-২, আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, মোঃ শাহ আলম ফরাজী, মোঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, মোঃ মহসিন খান, মোঃ জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মোঃ বাবর বেপারীসহ সিনিয়র আইনজীবীসহ অনান্য আইনজীবীরা।

সভায় আইনজীবীরা আরো বলেন, আমরা দল বুঝি না, মত বুঝি না। আমরা সকলে আইনজীবি। আমরা পুলিশি হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পুলিশ শুধু বাকি বিল্লাহকে রক্তাক্ত করেনি, পুরো আইনজীবিদের রক্তাক্ত করেছে। আমরা সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাই। সঠিক বিচার না পেলে অভিলম্বে কোর্টের সকল কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে নেব। যথার্থ মূল্যের মাধ্যমে রক্তের প্রতিদান দিতে হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

সভায় এএসআই হিমন ইসলামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের করা হবে। কোর্ট ফির টাকা আইনজীবি সমিতি বহন করবে বলে সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয়।

অপরদিকে চাঁদপুর মডেল থানার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, গত (১৭ জানুয়ারী) সোমবার দুপুর অনুমান ২টা ৩০ মিনিটের সময় সদর মডেল থানা, চাঁদপুরে কর্মরত এএসআই মো. হিমন ইসলাম সরকারি ডিউটি করার জন্য তার নামে ইস্যুকৃত সরকারি ওয়াকিটকি ও সরকারি মটর সাইকেলযোগে চাঁদপুর ষোলঘর তার ভাড়াবাসা হতে ডিউটি করার জন্য থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ঐ দিন দুপুর অনুমান ২টা ৪৫ মিনিটের সময় চাঁদপুর সদর মডেল থানাধীন বিষ্ণুদী এলাকাস্থ চাঁদপুর বাস্ট স্ট্যান্ড মোড়ে ফয়সাল মার্কেটের সামনে পৌঁছালে রং-সাইড হতে অজ্ঞাত নাম্বার বিহীন একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার চালক বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে অটো চালিয়ে এসে এএসআই মোঃ হিমন ইসলাম এর মটর সাইকেলে ধাক্কা মারে। অতঃপর তিনি মটর সাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে যায় এবং জখম প্রাপ্ত হয়।

তখন এএসআই মো. হিমন ইসলাম অটোরিকশার চালককে আটক করে নিজ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাবাদের সময় অপরিচিত বিবাদী আব্দুল্লাহ হিল বাকী ঘটনাস্থলে এসে অটোরিকশার ড্রাইভারকে ছেড়ে দিতে বলে ও এএসআই মোঃ হিমন ইসলাম এর সাথে তর্কবিতর্কে লিপ্ত হয় এবং অটো চালককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

ওই সময় মোঃ হিমন ইসলাম নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে জানান তিনি চাঁদপুর সদর মডেল থানায় এএসআই হিসাবে কর্মরত আছেন। পুলিশ পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে বিবাদী আব্দুল্লাহ হিল বাকী জনসম্মুখে এএসআই মো. হিমন ইসলামকে আওয়ামী লীগ সরকারের পেটুয়া বাহিনীর সদস্য বলে বিদ্রুপ করে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের বিদ্বেষ প্রকাশ করে ক্ষতি সাধনের হুমকি ও পরে দেখে নেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আক্রোশ বশঃত মারমুখি হইয়া গালি গালাজ শুরু করে এবং এএসআই মোঃ হিমন ইসলাম কিছু বুঝে উঠার আগেই বিবাদী আব্দুল্লাহ হিল বাকী জনসম্মুখে বাম হাত দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করিয়া হত্যার চেষ্টা করতঃ ডান হাত দিয়া তাহার বাম গালে থাপ্পড় মারে এবং বেদর মারধরের প্রস্তুতি নেওয়াসহ পূনরায় থাপ্পড় মারতে গেলে এএসআই মোঃ হিমন ইসলাম আত্মরক্ষার্থে তাহার হাতে থাকা হেলমেট দিয়ে তাহার থাপ্পড় প্রতিহত করে।

পরবর্তীতে এএসআই মো. হিমন ইসলাম স্থানীয় লোকজনদের সহযোগিতায় চাঁদপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করে। তিনি বাদী হয়ে বিবাদী আব্দুল্লাহ হিল বাকী পিতা- মৃত আঃ হাকিম, সাং- হাপানিয়া, বর্তমানে আদর্শ মুসলিম পাড়া, পৌর ৮নং ওয়ার্ড, থানা ও জেলা-চাঁদপুর এর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৯/৩৩২/৩৫৩/৩০৭/৫০৬ ধারার অভিযোগ দায়ের করিলে চাঁদপুর সদর মডেল থানার মামলা নং- ৪০/৪০, তাং- ২৪/০১/২০২২ইং ধারা-১৮৯/৩৩২/৩৫৩/৩০৭/৫০৬ রুজু করে। মামলাটি তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়ার উপর অর্পন করা হয়। অতিদ্ররুত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ বলেন, পুলিশের ডিউটিরত অবস্থায় তার কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান এবং তাকে মারধর করার অপরাধে চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো: হিমন ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এখন তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।