বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আর ছুটতে হবে না—এমন প্রত্যাশা নিয়েই প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবার। তবে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজক কমিটির এ আশার বাণী পরীক্ষার প্রতিটি ধাপেই ফিকে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমার পরিবর্তে বেড়েছে, স্বস্তির বদলে বেড়েছে মানসিক চাপ। তাই ভবিষ্যতে এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ভর্তি পরীক্ষার প্রতি ইউনিটের দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলা হলেও গ্রেড পয়েন্ট বেশি চাওয়ায় বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগে অনেকে প্রাথমিক আবেদন করতে পারেনি। অন্যদিকে বেশি আবেদন সত্ত্বেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষায় চূড়ান্ত আবেদন ফি প্রথমে ৬০০ টাকা ধরা হলেও মাঝপথে ফি ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের অনেকে শুরু থেকেই সাধারণ ইউনিট ‘ডি’-এর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু গুচ্ছে ‘ডি’ ইউনিট রাখা হয়নি। এদিকে বাড়ির কাছেই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলা হলেও বাস্তবে ঢাকার অনেক শিক্ষার্থীকে ঢাকার বাইরে এবং ঢাকার বাইরের অনেক শিক্ষার্থীকে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না আসায় শিক্ষার্থীদের ঠিকই ভর্তির জন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্রে ছুটতে হয়েছে।
পরবর্তীতে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলেও গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে এ ইউনিটের ফলাফলে গরমিলের অভিযোগ আনে শিক্ষার্থীরা।’ বি’ ইউনিটের ফলাফলে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন অংশে উত্তর না দিয়েও নম্বর পেয়েছেন, আবার সঠিক উত্তর দিয়েও অনেকে নম্বর পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। শুরুতে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দিলেও পরবর্তীতে কিছু সময়ের জন্য ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল সরিয়ে নেয় আয়োজক কমিটি। কয়েক ঘণ্টা পর সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করলে সেখানেও ফলাফল গরমিলের অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে আয়োজক কমিটি ২ হাজার টাকায় ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ দিলে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করে। এবার ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে খাতা পুনর্নিরীক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি।
এ ছাড়া পরীক্ষা পরবর্তী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীদের আবারও ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে তাকে অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে। শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এই ‘ফি’কে অমানবিক আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আগের মতো স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটা অংশও এ পদ্ধতির পরীক্ষায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আগামী বছরে গুচ্ছে থাকার বিরোধিতা করবেন বলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের সভাপতি জাকারিয়া মিয়া বলেন, অধিক সংখ্যক পরীক্ষার্থীকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া দরকার ছিল। গুচ্ছে যাওয়াটা সে সময় অনেক শিক্ষক মেনে নেননি, কারণ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে যায়নি। এবার ফলাফলসহ অনেক অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। তবে ভবিষ্যতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা রাখা উচিত হবে কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করা এখনই ঠিক হবে না। এটা নির্ভর করে অধিকাংশ শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ কীভাবে ভাববে তার ওপর।
সার্বিক বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশের পর কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা যাচাই করে দেখেছি, এগুলো সব বিচ্ছিন্ন অভিযোগ। একটা সংঘবদ্ধ চক্র পরীক্ষাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এটা করছে।’ ভবিষ্যতে একইভাবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে কি না আমি এখন জানি না। আগামী বছরের বিষয় আগামী বছর দেখা যাবে।’