১০৫ বছর আগের ফিলিস্তিনি পরিবারের কাছে অটেমান সৈনিকের রেখে যাওয়া অর্থ তুরস্ককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১০৫ বছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান সৈনিক ফিলিস্তিনি পরিবারের কাছে কিছু উসমানীয় লিরা গচ্ছিত রাখেন। কিন্তু সেই সৈনিক আর ফিরে না আসায় যুগ যুগ ধরে সেই অর্থগুলো সযন্তে সংরক্ষণ করেন ফিলিস্তিনি পরিবার।
গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে তুরস্কের কনসাল জেনারেল আহমেত রিজা দেমিরারকে ফিলিস্তিনি আল আলুল পরিবার গচ্ছিত অর্থগুলো ফিরিয়ে দেয়।
আলজাজিরা নেটকে রাগিব আল আলুল (৭৪ বছর) ও ইসমাইল আল আলুল তাদের বাবার বর্ণনা দিয়ে বংশপরম্পরায় পরিবারের অর্থ সংরক্ষণের কথা জানান। তাদের প্রপিতামহ উমর আল আলুলের কাছে এ অর্থ রাখা হয়েছিল। তখন উমরের ভাই মুতি জাইব আল আলুল উসমানীয় সেনাবাহিনীর সৈনিক ছিলেন। উমর আল আলুল একজন বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই সেই অটোমান সৈনিক তার কাছে নিজের অর্থ গচ্ছিত রাখেন।
যাওয়ার সময় অটোমান সৈনিক সেই পরিবারকে বলেছিল, ‘আমরা যদি আবার ফিরে আসি, তাহলে আমি এসে অর্থগুলো ফিরিয়ে নেব।’ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ সময় থেকে দীর্ঘ ১০৫ বছর যাবত বংশ পরম্পরায় আল আলুল পরিবার সেই অর্থ সংরক্ষণে রাখেন। এ দীর্ঘ সময়ে কেউ সেই অর্থ ব্যয়ের কথা ভাবেননি।
দীর্ঘকাল যাবত উসমানীয় সৈনিকের মূল্যবান অর্থ গচ্ছিত রাখায় ফিলিস্তিনি পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তুরস্কের কনসাল জেনারেল দেমিরার বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ও তুর্কি জাতি ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুর অংশীদার। একশ বছর আগে আমাদের প্রশাসনিক বিভক্তি হলেও আমাদের অন্তর অদ্যোবধি অভিন্ন।’
দেমিরার জানান, ফিলিস্তিন সরকারের সহায়তায় অর্থগুলো জেরুজালেমে অবস্থিত কনস্যুলেট জেনারেলে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ‘এবারই প্রথম কোনো আরব বা আঞ্চলিক দেশ তুরস্ককে কল্যাণ সংস্থার তহবিল ফেরত দিয়েছে।
রাগিব আল আলুল বলেন, অটোমান সৈন্যের গচ্ছিত অর্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব তার পরদাদা ওমর আল আলুলের কাছে ন্যস্ত করা হয়। তিনি বলেন, ‘এ অর্থ আমার চাচার কাছে দেওয়া হয়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তা আমাদের কাছে আছে। আমরা জানি না, সেই তুর্কি সৈনিক কি যুদ্ধে মারা গেছেন, নাকি পরবর্তী সময়ে মারা গেছেন। তাছাড়া আমরা তার নাম পর্যন্ত জানি না। এমনকি আমার চাচাও তার নাম ভুলে যায়। আমরা সর্বাত্মকভাবে তা সংরক্ষণ করি। আমরা মনে করি, তুরস্ক সরকার গচ্ছিত অর্থ সংরক্ষণের সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখেন।
আল আলুল বলেন, ‘অর্থে পরিমাণ ১৫২ অটোমান লিরা। আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই সময় এর অর্থমূল্য ছিল প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। পরিবারের কারাখানার ভেতর একটি লোহার সুরক্ষিত বাক্সে এ অর্থ রাখা হয়েছিল। নিরাপত্তার জন্য এর চাবি অন্য স্থারে রাখা হয়।
১৫১৬ সালে মারজ দাবিক যুদ্ধে মামলুকদের পরাজয়ের পর ফিলিস্তিন অটোমানদের অধীনে আসে। অতঃপর ১৯১৭ সালে ব্রিটিশদের কাছে উসামানীয় সম্রাজ্যের পরাজয়ের পর বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ফিলিস্তিনও হাতছাড়া হয়।
সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড