ঢাকা, সোমবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে প্রদর্শনী মাঠসহ ২ হাজার ১০ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টির পানির নিচে

স্টাফ রিপোর্টার : ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ২ হাজার ১০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী মাঠ রয়েছে। বৃষ্টি থামার পরও অধিকাংশ জমির পানি এখনো নামছে না। এতে অনেক এলাকায় শীতকালীন সবজি ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টিতে হাজীগঞ্জে ডুবে গেছে ২৮০ হেক্টর জমির আলু ও ৪০৫ হেক্টর জমির সরিষা। একই সঙ্গে ডুবে গেছে ৬১০ হেক্টর অন্যান্য শীতকালীন সবজির জমি। এছাড়া পেয়াজ ৪০ হেক্টর, টমেটো ১০ হেক্টর, গম ১০ হেক্টর, রোরো ধানের বীজতলা ৫০৫ হেক্টর, রসুন ১৫ হেক্টর, ভুট্ট ২০ হেক্টর, মরিচ ১০ হেক্টর, ধনিয়া ৪০ হেক্টর, খিরাই ৬৫ হেক্টর। টানা বৃষ্টিতে সব মিলিয়ে ২ হাজার ১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের অন্যতম আলু ও সরিষা উৎপাদনকারী অঞ্চল চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা। গত বছরও আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখেছিলেন অধিকাংশ কৃষক। উৎসাহ পেয়ে এবারও আলু চাষে নেমেছেন তাঁরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে জমিও প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু দুদিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ ফসলি জমি। হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
উপজেলার পাতানিশ গ্রামের কৃষক চাঁদ মিয়া বলেন, ‘আমি এ বছর দেড় একর জমিতে আলুবীজ রোপণ করেছি। আরও এক একরে আলুবীজ রোপণ করব। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। যার ফলে জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আলুবীজ বৃষ্টির পানিতে ডুবে এখন পচনের মুখে। আলুবীজ পচে নষ্ট হয়ে গেলে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমাকে।’ কৃষক মুকবুল হোসেন জানান, কৃষকেরা জমিতে সার এবং কীটনাশক দিয়ে আলুবীজ রোপণের জন্য প্রস্তুত করেছেন। বৃষ্টির কারণে প্রস্তুতকৃত জমি নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। অপর দিকে আলুর উৎপাদন ব্যাহত হলে আলুর দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত বছর আলুর দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা আবারও আলু চাষে মনোযোগী হন। ফলে সবাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন এ বছর পেছনের সব ঘাটতি পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকদের সেই আশা গুঁড়েবালি। ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মাঠকে মাঠ ফসলি জমি এখন পানির নিচে। এর মধ্যে যেসব ফসল এখনই ঘরে তোলার সময় হয়েছে, সেসবও ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষি বিভাগ আমাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকেরা বলছেন, এমনিতেই সার ও বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ আগের মতো নেই। তারপরও কৃষি বিভাগ কিছু সার ও বীজ দিয়ে এ বছর সহযোগিতা করেছে। এতে কৃষকদের উপকার হয়েছে। কিন্তু যে আশা নিয়ে বীজ বপন করেছেন, তা যেন জলেই ভেসে যাচ্ছে। এদিকে অসময়ের এই বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজিরই ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের অলিপুর এলাকার মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘এই মৌসুমে সবজির ভালোই ফলন হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমাদের মনে হয় সব শেষ হয়ে যাবে।’ উপজেলার চেঙ্গাতলি এলাকার কৃষক খোরশেদ বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে শীতকালীন সব ধরনের শাকসবজিরই ক্ষতি হচ্ছে। এতে এ মৌসুমে সব ধরনের শাকসবজির দাম আকাশচুম্বী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষকেরা। হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিলরুবা খানম বলেন, টানা বৃষ্টিতে কৃষকের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখেছি হাজীগঞ্জের ২ হাজার ১০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সংখ্যা নির্ণয় করে করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রেরণ করেছি। এছাড়া আলু চাষীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি তাদেরকে ভুট্টা চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করছি।

সর্বশেষ - হাজীগঞ্জ

জনপ্রিয় - হাজীগঞ্জ