ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মতলব উত্তরে বিভিন্ন ইউনিয়নে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ পেতে ব্যাপক দুর্নীতি ও চরম ভোগান্তির অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি : এ বছরের জানুয়ারি মাসের এক তারিখ থেকে স্কুলে ভর্তি, এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, পাসপোর্টের জন্য আবেদনসহ আরো কিছু ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কিন্তু উপজেলার জনসাধারন বলছেন, অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে ইউনিয়ন থেকে উপজেলায় আসা একজন বলেন, তার ঠিকানা যাচাই সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হওয়ায় তিন-চার মাস ঘুরেও বাচ্চার সনদ নিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, তার স্থায়ী ঠিকানা বলে কিছু নেই। তাই নিবন্ধন ফর্মে বর্তমান ঠিকানার জায়গায় বিদ্যুৎ বিলের কপি দিয়েছেন প্রমাণ হিসেবে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিলে অন্যের নাম থাকায় নিবন্ধন ইউনিয়ন পরিষদ কর্মকর্তারা তার আবেদন গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “কর্মকর্তারা বলছেন বিদ্যুৎ বিলে আমার নাম না থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু আমার নিজের বাড়ি নেই অন্যের জায়গাতে থাকি, বিলে আমার নাম কীভাবে থাকবে?”
“তারা আমার আবেদনপত্র গ্রহণও করছে না, সমস্যার সমাধান কীভাবে করা যাবে তাও বলছে না। এখন পর্যন্ত জানি না সনদ কীভাবে পাবো।”
সুলতানাবাদ ইউনিয়নের একজন বলেন, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০০১ সালের পর যাদের জন্ম তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে বাবা-মা’র জন্ম নিবন্ধন কপি প্রয়োজন । কাজেই সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করতে তার নিবন্ধন ইংরেজী করে নিতে বলেছে কিন্তু আজ দুই মাস হল এখনও পাইনি আর কবে পাব তাও জানি না।
তিনি আরো বলেন,গত দুই মাসে চার-পাঁচ বার ইউনিয়ন পরিষদে ও একবার উপজেলাতেও গিয়েছি কিন্তু কোনি সমাধান পাইনি। এ বলে তার কথা ও বলে তার কথা।
তার মত একই অভিযোগ পাওয়া গেছে আরো বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী ২০০১ সালের আগে যাদের জন্ম তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর প্রয়োজন হওয়ার কথা।
উপজেলায় কথা হয় আরেক জনের সাথে তিনি বলেন, “আমার দুই সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ করানো ছিল, কিন্তু সেখানে তাদের মায়ের নামে ভুল ছিল। পরে সেটি সংশোধন করি এবং গত বছরের সেপ্টেম্বরে আমার কাছে আমার দুই সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রিন্ট করা কপি হস্তান্তর করা হয়, যেটিতে সনদের দায়িত্বে থাকা আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের স্বাক্ষরও ছিল।”
“কিন্তু কিছুদিন আগে সন্তানদের পাসপোর্ট করাতে গিয়ে ঐ ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর দেয়ার পর দেখি ঐ নম্বর গ্রহণ করছে না। পরে জন্ম নিবন্ধন অফিসে যোগাযোগ করলে তারা জানায় যে আমার সন্তানদের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন করাই হয়নি।”
“অর্থাৎ ডেটাবেসে তাদের জন্ম নিবন্ধনের তথ্য নেই, যদিও আমার কাছে সনদের প্রিন্ট করা কপি রয়েছে।”
সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হয় সংশোধনের জন্য আবেদন করতে।
“অর্থাৎ সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়াটা আবার নতুন করার উপদেশ দেয়া হয় আমাকে।”
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা, প্রক্রিয়া নিয়ে কর্মকর্তাদের স্বচ্ছ ধারণার অভাব, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ করছেন আবেদনকারীরা।
এবিষয়ে উপজেলা কর্মকর্তাগন কোন কথা বলতে রাজি হয়নি,যদিও তারা বুঝিয়েছেন প্রাথমিক সকল কাজ ইউনিয়ন পরিষদের তাদের কাছে জরুরি প্রয়োজনে সংশোধন করা হয় মাত্র। তারপরও উপজেলা পরিষদে দেখা গেছে তারা বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগতদের আন্তরিক ভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
তবে এবিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বরত কেউ কোন কথা বলেননি।
মতলব উত্তর এর বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় সব ইউনিয়নেই কম-বেশি একই অবস্থা।
ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, সরকার নির্ধারিত ফি এর থেকে অধিক পরিমানে অর্থ আদায় করছে তাদের কাছ থেকে।
অনেকেই বলছেন কার্যালয়গুলোতে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাগরিকদের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন না। সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে বলে দাবি সনদ নিতে আসা অনেকের।
নাম প্রকাশ না করে একজন বলেন “আমি বেশ কয়েকবার আমার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছি। সেখানকার অধিকাংশই আবেদনকারীদের সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। অনেক সময় কোনো তথ্য জানতে চাইলেও স্পষ্টভাবে উত্তর দেয় না।”
আগে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করতে বাবা-মা’র জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রয়োজন হলেও এই বছরের শুরু থেকে নিয়মে পরিবর্তন এনেছে সরকার। আর তারপর থেকেই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে বলছেন আবেদনকারীরা।
তবে যান্ত্রিক ত্রæটি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার, প্রক্রিয়া নিয়ে কর্মকর্তাদের স্বচ্ছ ধারণার অভাব, দুর্নীতি সহ নানা অভিযোগ করছেন নাগরিকরা।

সর্বশেষ - মতলব উত্তর

জনপ্রিয় - মতলব উত্তর