দুই রাত ধরে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে চিতা বাঘ। রাস্তার গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে কখনো প্রাচীর টপকে ঢুকে যাচ্ছে ভবনের ভেতর। এমনকি ভবনের দরজা দিয়ে পার্কিং লটেও পৌঁছে যাচ্ছে।
এখানেও শেষ নয়। মানুষের ঘরের দরজায়ও ধাক্কা দিয়েছে চিতা বাঘ। হাড় হিম করা ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে। গত শনিবার রাতে সিসিটিভি ক্যামেরায় প্রথম ধরা পড়ে চিতা বাঘটির আনাগোনা। এরপর লখনৌর রাস্তায় বারবার দেখা গেছে তাকে। ভারতের মধ্যপ্রদেশের লখনৌ শহরের ঘটনা এটি।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যরাতে মেয়েদের হোস্টেলে ঢুকে গেছে ওই চিতাবাঘ। রবিবার মাঝরাতে লখনৌ শহরের ইন্টিগ্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেডিস হোস্টেলে ওই ঘটনায় চিতাবাঘটিকে তাড়াতে গিয়ে ১৫ জন জখম হয়েছেন।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, বাঘের কামড়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে এক যুবকের। পরে চিতাবাঘটিকে ধরতে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও সোমবার সকাল পর্যন্ত তার নাগাল পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, লখনৌর পাহাড়পুর, আদিলনগর, কল্যাণপুর এলাকায় বারবার বার দেখা গেছে চিতাবাঘটিকে। যদিও তাকে ধরার সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে চিতাবাঘের হামলার ভয়ে উৎসবের মওসুমে বাধ্য হয়েই ঘরবন্দি হয়েছেন নবাবনগরীর বাসিন্দারা।
আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে ‘বাঘ’ তাড়াতে কেউ বাড়ির ভিতরেই তারস্বরে গান বাজিয়েছেন। কেউ আবার গলা ছেড়ে পড়েছেন হনুমান চালিসা। কল্যাণপুরের সীমান্তনগরের অঞ্জু যাদব জানান, তার ৫ বছরের ছেলে বাড়ির বাইরে খেলা করছিল। তিনি ছিলেন ঘরের ভিতরে। ঠিক তখনই কেউ চিৎকার করে বলে তাদের কলোনিতে একটি চিতাবাঘ ঢুকে পড়েছে।
অঞ্জু আরো বলেন, মুহূর্তের মধ্যে কী যেন একটা হয়ে যায়। আমার স্বামী ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি প্রচণ্ড ভয়ে চিৎকার করে হনুমান চালিসা আওড়াতে শুরু করি।
বিহারী মার্গের কাঞ্চনায় বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন অনিতা সিংহ। তার বাড়িও কল্যাণপুরে। অনিতা জানান, বিয়ে বাড়ি থেকে বাড়িতে ফেরার জন্য একটি অটোও পাননি তিনি। শেষে এক ট্যাক্সিচালক মোটা টাকা ভাড়ার বিনিময়ে যেতে রাজি হন। কিন্তু সেই ট্যাক্সিও বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরে কোনো মতে তাকে নামিয়েই উল্টো দিকে চলে যায়।
অনিতা জানান, ওই রাস্তাটুকু প্রায় প্রাণ হাতে করে হেঁটেছেন তিনি। বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে উচ্চগ্রামে গান চালিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে আওয়াজ শুনে চিতাবাঘটি তার বাড়ির ধারেপাশে না ঘেঁষে।
জানকিপুরমের পাহাড়পুর এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য কোনো ঝুঁকি নেননি। চিতাবাঘটি ঘোরাফেরা করার খবর শুনে সেখানকার অনেকেই আগামী কয়েকদিনের বাড়িতে থাকার রসদ জুটিয়ে ঘরবন্দি হয়েছেন। উৎসবের মওসুমে বাড়ির বাইরে না বের হতে পারা এক রকম শাস্তিই। কিন্তু জানকিপুরমের রাশি জওহরির বক্তব্য, আনন্দ আগে না জীবন আগে!
দেখুন সেই ভিডিও …