জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সারাদেশে কেন প্রতিবাদ হলো না- এ প্রশ্ন তুলেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সে সময় ঢাকায় হয়তো প্রতিবাদের পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু ঢাকার বাইরে অন্যান্য অঞ্চল বরিশালে কিংবা চুয়াডাঙ্গার মতো এলাকায় কেন প্রতিবাদ হলো না। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে আওয়ামী লীগের ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, দল তখন কোথায় ছিল?
বুধবার সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন প্রশ্ন তোলেন ড. শামসুল আলম। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসের লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন সেন্টারে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়। এ কর্নারে বঙ্গবন্ধুর জীবনী এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ বই ও ছবি রয়েছে। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ইতিহাসবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন সভা পরিচালনা করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মহিরুহ ছিলেন। তার মতো ব্যক্তিত্ব ছাড়া নিরস্ত্র জাতিকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মতো এত বড় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হতো না। তবে দেশ পরিচালনায় সংগঠনের সহায়তা প্রয়োজন ছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের গোটা ৯ মাস চীনে কাটিয়ে স্বাধীন দেশে ফেরা কে এম কায়সার তৎকালীন বার্মা আজকের মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। এ রকম বিষয়গুলোতে জাতির পিতাকে সাংগঠনিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন ছিল।
ড. শামসুল আলম আরও বলেন, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আত্মত্যাগের ঘটনার মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া একটি জাতির যে ধরনের সাংস্কৃতিক এবং মননশীল বিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, দুঃখজনকভাবে তা হয়নি। শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল, তা কি পূরণ হয়েছে? কেন হলো না- তার একটা নির্মোহ বিশ্নেষণ প্রয়োজন।
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, আসল কথা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। যা জানি, তা ভাসা ভাসা। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করা হয়েছে ছয়বার। তারপরও মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। নিজের গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোন ধর্ষিত হওয়ার যে তথ্য বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। এ সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপরে। বীরাঙ্গনাদের নিয়ে আসলে কোনো গবেষণাই হয়নি। শহীদের প্রকৃত সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি। গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারেরও বেশি। মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে মৌলিক গবেষণা নেই।
ড. আতিউর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কারা করেছেন। কেন কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তিনিও নিজের গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, তারা দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়াদের ৭৮ শতাংশ কৃষকের সন্তান। তাদের গড় বয়স ছিল ২২ বছর। তারা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধে গেল, বঙ্গবন্ধু কেমন বাংলাদেশ চেয়েছেন, তা জানতে হবে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক বলেন, জাতি হিসেবে বাঙালি বড় নিষ্ঠুর। দুই বছর ধরে করোনা মেনে নিচ্ছে অথচ স্বাধীন জাতির পিতাকে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় দেওয়া হলো না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির মধ্যে অনেক বেশি অবাস্তব প্রত্যাশা ছিল। এক জীবনে সব কিছুই অর্জন সম্ভব বলে আশা ছিল তাদের।