ঢাকা, সোমবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে হতাশ জেলেরা, বরিশালে সরগরম ইলিশ মোকাম

ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকে আবার ইলিশ ধরা শুরু করেন জেলেরা। দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মাছের আড়ত বরিশালের পোর্ট রোডের মোকামে মঙ্গলবার ভোর থেকেই বিকিকিনির ধুম পড়ে। ক্রেতাদের ভি?ড়ে মুখর ছিল পুরো মোকাম এলাকা। তবে নদীতে নেমে হতাশ হয়ে ফিরছেন চাঁদপুরের জেলেরা।

আশানুরূপ ইলিশের দেখা না পাওয়ায় নৌকার জ্বালানি খরচ উঠছে না বলে দাবি তাদের। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষে ঘাটে মাছ আসতে শুরু হওয়ায় খুশি চাঁদপুরের আড়তদাররা। ব্যুরো ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও মেঘনাসহ কয়েকটি নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। শীত মৌসুমের শুরুতে হঠাৎ জালে এত ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরাও অবাক। প্রচুর ইলিশের সরবরাহ থাকায় দামও কমেছে কিছুটা। ক্রেতারাও খুশি। ইলিশ কিনছেন যে যার সাধ্যমতো। তবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রয় করা ইলিশ ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি আড়ত ঘরের সামনে ককশিট প্যাকেটের স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আড়তদার, মৎস্য শ্রমিক ও ক্রেতাদের ভিড় পোর্ট রোডে। কীর্তনখোলা নদী থেকে খাল দিয়ে একের পর এক ইলিশবোঝাই নৌকা, ট্রলার, স্পিড বোট এসে ভিড়ছে ঘাটে। সঙ্গে সঙ্গে এসব নৌকা ঘিরে ধরছেন পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের আড়তদাররা। সেই ইলিশ কিনে স্তূপ করে রেখেছেন আড়তের সামনেই। জেলেরা জানান, উপকূল এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশির ভাগ ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি। এ শীত মৌসুমে মেঘনায় এত ইলিশ ধরা পড়ার নজির নেই।

পাইকারি আড়তদাররা জানান, এক কেজি ২০০ থেকে এক কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের মাছ কেজিপ্রতি এক হাজার টাকা, এক কেজি ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছ এক হাজার ১০০ টাকা, এক কেজির বেশি ওজনের মাছ ৯০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছ ৭০০ টাকা কেজি, দুটিতে এক কেজি ওজনের মাছ কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা, তিনটিতে ১ কেজি ওজনের মাছ ৫০০ টাকা এবং ৮ থেকে ৯টিতে কেজি মাছের দাম ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বরিশাল পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, প্রচুর ইলিশ এসেছে। দামও খুব বেশি নয়।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের ইলিশ রক্ষা অভিযানে বিভাগে ৮৯৯ জনের কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া ১২ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৯ টাকার কারেন্ট জাল জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় ৬০ দশমিক ১৬১ লাখ মিটার দৈর্ঘ্যরে কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। দুই হাজার ৬৫১টি অভিযান থেকে ৯ দশমিক ৩৭৯ টন ইলিশ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে উপকূলীয় এলাকার তুলনায় বরিশাল নদী অঞ্চলে এবার বেশি জেলের কারাদণ্ড হয়েছে।

চাঁদপুর : মেঘনা থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসা জেলে মনির ও আব্দুর রহমানসহ কয়েকজন বলেন, যে আশা করে নদীতে গিয়েছিলাম তা পূরণ হয়নি। আমরা ১০-১২ জন একটি নৌকা নিয়ে নদীতে গিয়েছিলাম। নদী থেকে ফিরে মাছ বিক্রি করেছি মাত্র ১২ হাজার টাকার। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে যে হিসাবে মাছ পাওয়ার কথা ছিল, তা একেবারেই পাইনি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আরও ধারদেনায় পড়ে যাব। সরেজমিনে মঙ্গলবার চাঁদপুর মাছঘাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত চারদিক। যদিও ঘাটে ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম। ঘাটে এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা। এক কেজি থেকে ১২শ গ্রামের ইলিশের দাম এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা এবং ৬শ থেকে ৯শ গ্রামের ইলিশের দাম ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি রোটারিয়ান আবদুল বারী জমাদার মানিক জানান, চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ ঘাটে আসেনি। তবে আশা করছি দুই থেকে তিন দিন পর আমদানি বৃদ্ধি পাবে।

 

সর্বশেষ - ইলিশ

জনপ্রিয় - ইলিশ