ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মতলব দক্ষিণে জেলেদের মাঝে বিতরণকৃত ১৩টি ছাগলের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় বিতরণকৃত ৩২টি ছাগলের মধ্যে ১৩টি মারা গেছে। এ নিয়ে উপকারভোগী জেলেদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর কুমিল্লা মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় জেলেদের বিকল্প কর্মসূচি হিসেবে ৬০টি ছাগল বিতরণের জন্য বরাদ্দ আসে। জেলেদের মাঝে বিতরণ করা ছাগলগুলো ঠিকাদারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। যার প্রতিটি মূল্য ছিলো ৮ হাজার টাকা।
গত ২৬ জানুয়ারি নিবন্ধনকৃত ১৬ জন জেলের মাঝে দুটি করে মোট ৩২টি ছাগল বিতরণ করা হয়। বিতরণকৃত ছাগলগুলোর মধ্যে মতলব পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের চরমুকুন্দি গ্রামের মিলন সরকারের দুটি, আনোয়ার হোসেন প্রধানের দুটি, আলী আক্তার সরকারের একটি, বোরহান প্রধানের দুটি, জাহাঙ্গীরের দুটি, মোজাম্মেল সরকারের একটি, সাজু মিয়ার দুটি, জাকির হোসেনের একটিসহ মোট ১৩টি ছাগল কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যায়। জেলেদের অভিযোগ, আমাদের যে ছাগল দেয়া হয়েছিলো তার বয়স অনেক কম এবং রোগাক্রান্ত। যখন আমাদেরকে এ ছাগলগুলো দেয়া হয়, তখন-ই আমরা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলেছি আরও বড় (বয়স্ক) ছাগল দিতে। কিন্তু তিনি আমাদের কথার কর্ণপাত করেন নি।
উপকারভোগী নিবন্ধিত জেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ছাগলটি পাওয়ার একদিন পরেই মারা গেছে। জেলে বোরহান প্রধান বলেন, আমার ছাগলের মৃত্যুর বিষয়টি সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনকে জানালে তিনি মাটিতে পুঁতে ফেলতে বলেন। পরবর্তীতে তিনি ছাগলের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিলেও তাকে অফিসে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলে আক্তার সরকার বলেন, আমার দুটি ছাগলের মধ্যে একটি মারা গেছে। এখন যেটি আছে তাকে এ পর্যন্ত হাজার টাকার ওষুধ খাওয়াানো হয়েছে। আমাদের যে ছাগলগুলো দেয়া হয়েছে তার আনুমানিক বাজারমূল্য তিন হাজার টাকার বেশি হবে না।
জেলে মিলন সরকার বলেন, যে ছাগল দেয়া হয়েছে এগুলো সব দুধের ছাগল। মায়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনার কারণেই এগুলো দুর্বল এবং আকারেও ছোট। ছাগল পাওয়ার পর অনেক ওষুধ খাওয়ানো হয়ে ছিলো, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
এদিকে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে বিতরণকৃত ছাগলের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বরাদ্দের বিপরীতে কম দামের ছাগল বিতরণ করে ঠিকাদার ও মৎস্য কর্মকর্তা অনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন বলে প্রচার হচ্ছে। জেলেদের মাঝে বিতরণের জন্যে ৬০টি ছাগলের বিপরীতে ৩২টি ছাগল বিতরণ করা হলেও বাকি ছাগল কাদের দেয়া হয়েছে। সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, যাদের ছাগল মারা গেছে পরবর্তীতে তাদের ছাগল দিয়ে দেয়া হবে। আমি নিজে ঠিকাদারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ছাগলগুলো রোগাক্রান্ত বা পরিপক্ক হওয়ার আগে মায়ের দুধ ছাড়িয়ে নেয়ায় পুষ্টিহীনতার কারণে মারা যেতে পারে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, প্রকল্পের আওতায় বিতরণকৃত ছাগলের মৃত্যুর বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি।
এদিকে মতলব দক্ষিণে বৃহত্তর কুমিল্লা মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় জেলেদের বিকল্প কর্মসূচির আওতায় প্রকৃত জেলে নির্বাচনে ও ছাগল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধিত না হয়ে অন্যপেশার লোকদের জেলে হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে। এছাড়া ছাগল বিতরণের ঠিকাদারের কাছ থেকে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন সুস্থ, সবল ছাগল বুঝে না নিয়ে রোগাক্রান্ত ছাগলগুলো জেলেদের মাঝে বিতরণ করেছেন।
উপজেলার মৎস্য অফিসে জেলেদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য প্রকল্পগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে প্রকৃত জেলেরা অভিযোগ করেছেন। ফলে প্রকৃত জেলেরা এ কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সর্বশেষ - মতলব দক্ষিণ

জনপ্রিয় - মতলব দক্ষিণ